বিনা ঔষুধে ধূমপান ছাড়ার কার্যকরী কৌশল | ধূমপান ছাড়ার ৭টি কার্যকরী উপায়

Join Telegram Channel

এই আর্টিকেলে আমরা আলোচনা করবো যে কিভাবে আপনি বিনা ঔষুধে ধূমপান ছাড়তে পারবেন, তাছাড়াও ধূমপান ছাড়ার বিভিন্ন কার্যকরী উপায় নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।

তাই আপনি যদি এই বিষয়ে জানতে আগ্রহী হয়ে থাকেন তাহলে পুরো আর্টিকেলটি অবশ্যই মনোযোগ সহকারে পড়বেন।

 

বিনা ঔষুধে ধূমপান ছাড়ার কার্যকর কৌশল

 

ধূমপান ছাড়তে চান কিন্তু পারছেন না, তাহলে আর্টিকেলটি আপনার জন্যই। ধূমপান ছাড়তে গিয়ে মাঝপথে অনেকেই মনোবল হারিয়ে পেলেন।

তাই প্রথমেই বলছি ধূমপান করলে আপনার শরীরের ভিতর কি কি ঘটে?

এতে আপনার ইচ্ছা শক্তি মজবুত হবে। আপনারা জানেন অক্সিজেন ছাড়া মানুষ বাঁচতে পারে না। আমাদের নিশ্বাসের মাধ্যমে অক্সিজেন প্রথমে ফুসফুসে যায় সেখান থেকে ডুকে যায় রক্তে।

ফুসফুসে আছে কোটি কোটি বায়ুধুলি, এই বায়ুধুলি দিয়েই ফুসফুস দিয়ে অক্সিজেন রক্তে প্রবেশ করে।

ধূমপান আপনার ফুসফুসের বায়ুধুলি গুলোকে ধ্বংস করতে থাকে। একবার ধ্বংস হলে বায়ুধুলি আবার নতুন করে তৈরি হয় না।

কোটি কোটি বায়ুধুলি থাকার কারণে কিছু নষ্ট হলে আমরা তা বুঝতে পারি না। তবে নিরবে ফুসফুসের ক্ষতি হতে থাকে। দিনে দিনে অনেক বায়ুধুলি ধ্বংস হলে শুরু হয় শ্বাস কষ্টের রোগ।

এই শ্বাস কষ্টের রোগ শুরু হলে তা থেকে আর পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার উপায় নেই। শ্বাস কষ্টের পাশাপাশি ধূমপান ফুসফুসের ক্যান্সারের ঝুকি বাড়ায় অন্তত ২৫ গুণ।

শুধু ফুসফুস নয় শরীরের প্রায় সব খানেই ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে ধূমপান। যেমন: মুখ, গলা পাকস্থলী, লিভার, কিডনী, মুত্রথলী, জড়ায়ু সহ এমন লম্বা একটি লিস্ট।

 

ধূমপান সম্পর্কে প্রচলিত কিছু ভূল ধারণা

 

কিছু ধূমপান কারীকে বলতে শুনেছি, ‘ধূমপান ত শুধু ঝুঁকি বাড়ায়’ তার মানে হতেও পারে আবার নাও হতে পারে। আমার হয়তো হবে না।

এরকম চিন্তা যারা করেন তাদের জন্য নিচে দুইটি সংজ্ঞা তুলে ধরা হলো:

. যারা ধূমপান করেন তাদের প্রতি দুইজনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু ঘটায় ধূমপান। অর্থাৎ জগতে যত মৃত্যুর কারণ আছে সে সব গুলো কারণ মিলে ৫০ জন ধূমপায়ীর মৃত্যু ঘটালে বাকী ৫০ জনের মৃত্যু ধূমপান একাই ঘটায়।

. ধূমপানকারীরা গড়ে ৮-১০ বছর কম বেঁচে থাকে। অর্থাৎ একজন অধূমপায়ী মানুষ যদি ৭০ বছর বাঁচে তবে আপনার বাঁচার সম্ভবনা ৬০-৬২ বছর।

আবার কিছু ধুমপায়ীরা বলেন, ‘মৃত্যু যখন আসবে আসবেই ক্যান্সারের ভয় করি না। যত দিন বেঁচে আছি আনন্দে বাঁচতে চাই।’

এখানে সমস্যা হলো ধূমপান মৃত্যুর আগেও আপনার আনন্দ সহ্য করতে পারে না। অনেক ভাবে বাধ সাধতে পারে। যেমন:

 

  • প্রজনন ক্ষমতা কমে যাওয়া, অর্থাৎ বাচ্চা হতে সমস্যা হওয়া।
  • বাচ্চা হলে বাচ্চার শরীরে জন্মগত ত্রুটি  থাকা।
  • অল্প বয়সে চামরায় ভাঝ পরা।
  • হাড় নরম হয়ে যাওয়া যে হাড় সহজেই ভেঙ্গে যেতে পারে।
  • দাত মাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়া।
  • দাত পড়ে যাওয়া।
  • চোখে ছানি পড়া।
  • শরীরের রোগ প্রতিরোদ ক্ষমতা কমে যাওয়া, যে কারণে করোণা হলে ঝুঁকি বেশি।

 

ধূমপান হার্টএটার্ক আর স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়

 

এটা শুনলে অনেকেই বলেন, যারা ধূমপান করে না তাদেরও তো হার্ট এটার্ক হয়, স্ট্রোক হয়।

কথা ঠিক আছে, কিন্তু যুক্তিটি ভূল। ঐ মানুষ গুলোর যে কারণে হার্ট এটার্ক বা স্ট্রোক হয় তা হলো, হাই ব্লাড প্রেসার বা অতিরিক্ত ওজন। আপনারও সেই একি কারণে হতে পারে।

উপরন্তু আপনি ধূমপান করে নতুন একটি ঝুঁকি যুক্ত করছেন। এই কথা গুলো শুনার পর কেও কেও বলেন, ধূমপানে আমার শরীরের যা ক্ষতি হওয়ার তা তো হয়েই গেছে, এখন আর ধূমপান ছেড়ে কোনো লাভ হবে না।

এটা সম্পূর্ণ ভূল একটি কথা। আপনি যত দিন ধরেই ধূমপান করেন না কেনো যেই মূহুর্ত থেকে আপনি ধূমপান ছাড়বেন তখন থেকেই আপনার শরূর নিজেকে মেরামতের কাজ শুরু করে দিবে।

এখন চলুন জেনে নেওয়া যাক যে,

 

ধূমপান ছেড়ে দিলে শরীরের কি মেরামত করতে শুরু করে?

 

  • শেষ সিগারেট খাওয়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই হার্টবিট আর ব্লাড প্রেসার স্বাভাবিক হয়ে আসতে থাকে।
  • ৮ ঘন্টার মধ্যে রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণ স্বাভাবিক হয়ে আসতে শুরু হতে থাকে।
  • ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে শরীর থেকে সব কার্বণ মনোক্সাইড দূর হয়ে যায়।
  • নাকের ঘ্রাণ আর মুখের স্বাদ ফিরে আসে।
  • ৭২ ঘণ্টার মধ্যে শ্বাস তন্ত্র স্বাভাবিক হতে শুরু করে।
  • ফলে শ্বাস নেওয়া সহজতর হয়।
  • ৩ থেকে ৯ মাসের মধ্যে ফুসফুসের ক্ষমতা ১০% পর্যন্ত বাড়তে পারে।
  • এক বছর পর আপনার হার্ট এটার্কের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
  • ৫ বছরের মধ্যে মুখ, গলা, মুত্রথলী ক্যান্সারের ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
  • জড়ায়ূর ক্যান্সার ও স্ট্রোকের ঝুঁকি একজন অধূমপায়ীর সমান হয়ে যায়।
  • ১০ বছর পর ফুসফুসের ক্যান্সারে মৃত্যু হওয়ার ঝুঁকি অর্ধেকে নেমে আসে।
  • ১৫ বছর পরে আপনার হার্ট এটার্কের ঝূকি আর যে কখনো ধূমপান করেনি তার হার্ট এটার্কের ঝুুঁকি সমান হয়ে যায়।

 

দারুন ব্যাপার তাই না। আশাকরি আপনার ধূমপান ছাড়ার মনোবোল শক্ত হয়েছে।

 

আরও পড়ুন:

 

ধূমপান ছাড়ার ৭টি কার্যকরী উপায় বা ধূমপান ছাড়ার ৭ পরামর্শ

 

১. সিগারেটে আর একটাও টান দেওয়া যাবে না। যখন আপনি সিন্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে যে ধূমপান ছেড়ে দিবেন তখন থেকে আর একটাও সিগারেটে টান দিবেন না।

গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, শুধু একটা সিগারেট বা শুধু একটা টান দিবো এমন চিন্তা ভাবনা থাকলে ধূমপান ছেড়ে দেওয়া খুবই দূরূহ হয়ে পরে। একটা টান দেওয়ার পরে বেশির ভাগ ধূমপান কারী আবার আগের মতো ধূমপানে চলে যায়। তাই আপনাকে শক্ত থাকতে হবে যে আর আপনাকে একটা সিগারেটেও টান দেওয়া যাবে না।

যে গুলো জিনিস দেখলে আপনার ধূমপান করতে মন চাইবে, যেমন: সিগারেট, লাইটার সেগুলো সড়িয়ে ফেলবেন।

যেসব যায়গা গুলোতে আপনি ধূমপান করতে পারলে সেই সব যায়গা গলোকে এড়িয়ে চলবেন।

যেই সময়ে আপনি ধূমপান করতেন সেই আপনি নিজেকে অন্য কাজে ব্যস্ত রাখবেন। যেমন: আপনি যদি সন্ধ্যার পরে সিগারেট খান সেই সময়টাতে আপনি অন্য যে কোনো একটি কাজ ধরবেন বা করবেন।

কিছু খাবার ধূমপানের স্বাদ বাড়িয়ে দেয় এবং আরও আকর্ষনীও করে তুলে, যেমন: মাংস, চা, কফি, কোল্ড পানীয় ইত্যাদি। তাই এগুলো পরিহার করবেন।

আবার কিছু কিছু খাবার ধূমপানের স্বাদকে একবারে বিশ্রি করে তুলে যেমন: ফলমুল, শাকসবজি। তাই এগুলো বেশি বেশি খাবেন।

২. ধূমপান বন্ধ করলে প্রথম কিছুদিন আপনার খারাপ লাগবে। এই খারাপ লাগা দূর করার পরিকল্পনা তৈরি করতে হবে আগে থেকেই।

ধূমপান বন্ধ করলে শরীরের যেসব বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে সেগুলো হচ্ছে, অস্থির লাগা, মেজাজ খিটখিটে হওয়া, ক্লান্ত লাগা, ঘুমের সমস্যা, কোষ্ঠকাঠিন্য, কোনো কাজে মনোযোগ দিতে না পারা।

এগুলো দেখা দিলে গাবড়ে যাবেন না। বুঝবেন এগুলো স্বাভাবিক এবং কিছুদিনের মধ্যেই সেড়ে যাবে।

নিজেকে মনে করিয়ে দিবেন এই খারাপ লাগার সময়েই আপনার শরীরের কত উপকার হচ্ছে।

৩. ধূমপানের ইচ্ছা ধমন করার উপায় বের করে রাখতে হবে। যখন সিগারেটে একটা টান দিতে খুব ইচ্ছা করবে তখন সেটিকে ঠেকানোর চেষ্টা করবেন। এই তাড়না দুই মিনিটের মাথায় খুব প্রবল হয়।

তাই নিজের মনকে অন্য দিকে নিতে হবে। কিভাবে করতে পারেন সেটির তিনটি উপায় বলে দিচ্ছি:

 

  • একজন বন্ধু নির্ধারণ করে রাখবেন যাকে ধুমপানের ইচ্ছা হলেই কল দিবেন। সে আপনাকে ধূমপান না করার জন্য উৎসাহ দিবে বা আপনার প্রিয় কোনো বিষয়ে গল্প শুরু করে দিবে।
  • যে কারণে আপনি ধূমপান ছাড়তে চান সে বিষয়ে চিন্তা করেন। যদি সেটি হয় আপনার ছোট মেয়ের জন্য তাহলে সাথে তার একটি ছবি রাখতে পারেন এবং সেটা দেখতে পারেন। যদি কিছুদিনের ভিতর বাচ্চা নেওয়ার কথা চিন্তা করেন তবে নিজেকে বুঝান যে এই ধূমপানের কারণে আপনার সন্তান ত্রুটি নিয়ে জন্মাতে পারে।
  • বাইরে থেকে একটু হেটে আসতে পারেন। তবে এই পদ্ধতি অবলম্বন করলে যদি টংয়ের দোকান থেকে সিগারেট কিনে খেতে ইচ্ছে করে তবে এই পদ্ধতি বাদ দিয়ে অন্য কোনো পদ্ধতি অবলম্বন করতে পারেন।

 

৪. ধূমপায়ী বন্ধুদের চেয়ে যে ধূমপান করেনা বা ধূমপান ছেড়েছে এমন বন্ধুদের সাথে বেশি সময় কাটাবেন। কেউ আপনাকে ধূমপান করতে বললে তাকে কিভাবে না করবেন সেটি চিন্তা করে রাখবেন।

বলতে পারেন যে, আমি ধূমপান ছেড়ে দিয়েছি বা ধন্যবাদ আমি ধূমপান করি না। আর এমন বন্ধু যদি থাকে যারা ধূমপান ছাড়তে সফল হয়েছে তাদের কাছ থেকে শুনতে পারেন যে তারা কি কি উপায় অবলম্বন করে সফল হয়েছে।

৫. নিয়মিত ব্যায়াম করবেন। প্রতিদিন অন্তত ৫ মিনিট করে ব্যায়াম করলেও তা ধূমপান ইচ্ছা কমাতে সাহায্য করতে পারে।

৬. কিছু অসুধ যেমন: নিকোটিন প্যাচ, ইনহেলার, স্প্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে। এগুলো ধূমপানের তাড়না কমাবে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী যেটা আপনার কাছে ভালো হয় সেটা শুরু করে দিতে পারেন।

৭. ছেড়ে দেওয়ার পরে আবার ধূমপান করলে নিরাশ হবেন না। আপনি একা নন সিংহভাগ ধূমপায়ী প্রথমবার ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার চেষ্টায় ব্যর্থ হন। যারা ধূমপান ছেড়েছেন তারা বেশিরভাগই সফল হয়েছে কয়েকবার চেষ্টা করার পরে।

তাই আপনি ছাড়ার প্রক্রিয়া শুরু করার পরে কোনো কারণে যদি একবার ধূমপান করেও ফেলেন নিরাশ হবেন না।

কোন পরিস্থিতে আপন নিজেকে আর আটকাতে পারেননি সেটি যাচাই করবেন। যাতে একি ভূল আর না হয়।

 

পরিশেষে, আশাকরি আর্টিকেলটি আপনার ভালো লেগেছে। এ বিষয়ে আপনার আরও কোনো প্রশ্ন থাকলে তা কমেন্ট বক্সে জানাতে পারেন। আর আর্টিকেলটি কেমন লেগেছে সেটিও জানাতে পারেন।

মনোযোগ সহকারে আর্টিকেলটি পড়ার জন্য আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ।

Spread the love
Join Telegram Channel

হ্যালো "ট্রিকবিডিব্লগ" বাসী আমি ওসমান আলী। দীর্ঘদিন থেকে অনলাইনে লেখালেখির পেশায় যুক্ত আছি। Trick BD Blog আমার নিজের হাতে তৈরি করা একটি ওয়েবসাইট। এখানে আমি প্রতিনিয়ত ব্লগিং, ইউটিউবিং ও প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টিপস এন্ড ট্রিক্স রিলেটেড আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!