প্রাচীন বাংলার ইতিহাসে শশাঙ্ক একটি অবিস্মরণীয় নাম, বাঙালি রাজাগণের মধ্যে তিনিই প্রথম সার্বভৌম নৃপতি হন।
তার উথাান, ঘটনাবহুল জীবন এবং কৃতিত্ব এককথায় সবকিছুই বিশেষ বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তিনি প্রাচীন বাংলার সর্বত্রই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে এক নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেন।
শশাঙ্ককে প্রাচীন বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা বলার কারণ
নিচে শশাঙ্ককে প্রাচীন বাংলার প্রথম স্বাধীন রাজা বলার কারণসমূহ আলোচনা করা হলোঃ
শশাঙ্ক প্রাচীন বাংলার রাজনীতিতে উল্কাপিন্ডের মতো নিজেকে আবির্ভাব ঘটান। কিছুকাল শাসন করে আবার বিলীন হয়ে যান তথাপি শশাঙ্কের রাজত্বকাল বাংলার রাজনৈতিক ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। কারণসমূহ হচ্ছে,
১. স্বাধীন গৌড় রাজ্যের উথান
ভারতে শশাঙ্কের বংশ পরিচয় ছির অজ্ঞাত। তথাপি তিনি নিজ শক্তি ও সাহসের বলে ইতিহাসের পদে প্রদীপের সামনে এসে দাঁড়ান এবং নিজের যোগ্যতায় সাফল্য লাভ করেন। তার মাধ্যমেই ৬০৬ সালে স্বাধীন গৌড় রাজ্যের উথান ঘটে।
২. মালবরাজের সাথে বন্ধুত্ব
শশাঙ্ক ছিলেন একজন সুচতুর ও বুদ্ধিমান শাসক এবং একই সাথে রাজ্য জয়ের জন্য উচ্চাকাঙ্কাসম্পন্ন শাসক। তিনি মারব রাজ দেবগুপ্তের সাথে বন্ধুত্ব স্থাপনের মাধ্যমে রাজনৈতিক দূরদর্শিতার পরিচয় দেন। কারণ শশাঙ্কের মালব-গৌড় জোট থানেশ্বর কনৌজ জোট এর বিরুদ্ধে গড়ে তোলেন গৌড়ের অখণ্ডতা রক্ষার স্বার্থে।
৩. রাজ্য জয়
সিংহাসনে আরোহণের পর শশাঙ্ক নিজ রাজ্যে নিরাপত্তা বিধান করার পর রাজ্য জয়ের দিকে মনোনিবেশ করেন। শশাঙ্ক দক্ষিণ দণ্ডভুক্তি, উৎকূল ও কঙ্গোদ রাজ জয় করেন। পশ্চিমে মগধ নিজ রাজ্যভুক্ত করেন। দক্ষিণে স্বাধীন বঙ্গ-রাজ্য তার সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে।
৪. উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ
উত্তর ভারতের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শশাঙ্ক এখানেও সফল হয়েছিলেন।
৫. প্রথম স্বাধীন রাজা
শশাঙ্ক অতি স্বল্প সময়ের মধ্যে এক বিশাল সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এবং উপাধি নিয়েছিলেন গৌড়েশ্বর। তার পূর্বে আর কোন বাঙালি রাজা এরূপ বিস্তৃত সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছে বলে উল্লেখ নেই। এছাড়া বাংলা ছিল আদিকাল থেকে কাব্য উপাখ্যানের বিষয়। শশাঙ্ক সে ধারণা পাল্টে দেন। শুধু রাজ্য বিস্তার নয় জনকল্যাণমূলক কাজ, প্রজাহিতৈষণা শাসন ব্যবস্থায় তিনি অবদান রাখেন। সুতরাং সার্বিক দিক দিয়ে তাকে প্রথম স্বাধীন নরপতি বলা যায়।
পরিশেষে বলা যায় যে, শশাঙ্ক শুধু একজন শক্তিশালী শাসক ছিলেন শুধু তাই নয় পক্ষান্তরে তিনি ছিলেন যথেষ্ট দক্ষতাসম্পন্ন শাসক। নিজ দক্ষতায় সমগ্র বাংলার একচ্ছত্র অধিপতি হন। এ কারণেই তাকে প্রথম বাঙালি জাতীয় রাজা হিসেবে গৌরবের খেতাব দেওয়া হয়েছে।


