জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে একক বিস্ময়কর প্রতিভা। সাহিত্যের প্রতিটি শাখাতেই তিনি সার্থকভাবে বিচরণ করেছেন। ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যটি কাজী নজরুল ইসলামের অন্যতম একটি শ্রেষ্ঠ কাব্যগ্রন্থ। এবং এই কাব্যের অন্যতম একটি কবিতা হচ্ছে ‘আগমনী’ কবিতা। এই কবিতায় কবি অসুরনাশিনী দুর্গার সংগ্রামী চিত্র এঁকে দেবীকে বন্দনা করেছেন।
আজকের এই আর্টিকেলটিতে আমরা ‘আগমনী কবিতার মূলভাব ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর’ নিয়ে আলোচনা করবো।
তাই আর দেরী না করে চলুন মূল আলোচনা শুরু করা যাক।
আগমনী কবিতার মূলভাব
’আগমনী’ কবিতাটি ‘অগ্নিবীণা’ কাব্যগ্রন্থের অন্যতম আলোচিত একটি কবিতা। ’আগমনী’ কবিতাটি প্রকাশিত হয় ১৩২৭ সালে আসার সংখ্যায়।
এই কবিতাটি ষান্মাত্রিক সমিল মাত্রাবৃত্ত ছন্দে রচিত। ‘আগমনী’ দেবী দুর্গার আগমন, দুর্গা পরমা প্রকৃতি, বিশ্বের আদি কারণ ও শিবপত্নী। মহিসাসুর বধের জন্যে ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, ইন্দ্র প্রমুখ দেবতার দেহ থেকে নির্গত সমবেত তেজরাশির নারীমূর্তি রূপ দুর্গা।
কাজী নজরুল ইসলাম দুর্গার এই তেজরূপ ও অসুর নিধনের রূপককে অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রামকেই রূপায়িত করেছেন।
শরৎকালে মা দুর্গার আগমনে আনন্দের সাড়া পড়ে যায়। মা দুর্গার আগমণ বার্তা ঘোষণার জন্য পুজা মণ্ডপে বাদ্য বেজে ওঠে যা পুরাকালের রণাঙ্গানের কৃত্রিম পরিবেশ সৃষ্টি করে। মহামাতার আবাহনের মাধ্যমে কবি কাজী নজরুল ইসলাম এ কবিতায় তার মূল বক্তব্যকে তুলে ধরেছেন।
শ্বাশ্বত নয় দানব শক্তি পায়ে পিষে যায় শির পশুর, দানব শক্তি, পশু শক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম এ কবিতার মূল প্রতিপাদ্য, মায়ের আবাহনের রূপকে তারই প্রকাশ।
পরিশেষে বলা যায় যে, যুব সমাজকে উদ্দীপ্ত করার জন্য অসুর নাশিনী দুর্গার আগমনকে কামনা করেছেন। মা দুর্গার আবাহনে দূর হোক সকল অশুভ শক্তি। এটাই হচ্ছে ’আগমনী’ কবিতার মূল ভাববস্তু।
আগমনী কবিতার জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
এবার আগমনী কবিতার কিছু গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর নিচে দেওয়া হলো:
’আগমনী’ কবিতায় সর্বাঙ্গে কীসের চিহ্ন সুবিস্তৃত?
উত্তর: আগমনী কবিতায় ‘যুদ্ধ প্রস্তুতির চিহ্ন’ সর্বাঙ্গে সুবিস্তৃত।
’আগমনী’ কবিতার সমাপ্তি ঘটেছে কীভাবে?
উত্তর: আগমনী কবিতার সমাপ্তি ঘটেছে, নিসর্গ, মর্ত্য-পাতালের সুর-অসুর, দৈত্য-দানবের প্রলয় মাতনে কবিতার সমাপ্তি ঘটেছে।
’আগমনী’ কবিতা কাদের যুদ্ধের কাহিনী অবলম্বনে রচিত?
উত্তর: আগমনী কবিতাটি দুর্গা ও অসুরের যুদ্ধের কাহিনী অলম্বনে রচিত। এখানে হিন্দু পুরাণ প্রাধান্য পেয়েছে।
’আগমনী’ কবিতার বিশ্বস্রষ্টা কেন স্থির থাকতে পারেনি?
উত্তর: আগমনী কবিতার বিশ্বস্রষ্টা তার রণোন্মত্ত সন্তানদের সৃষ্টির মহাসংগ্রাম দেখে স্থির থাকতে পারেননি।
সৈনিকদের পদভারে ধরার অবস্থা কী?
উত্তর: সৈনিকদের পদভারে ধরা কাঁপে থর থর।
মৃত সুরাসুরের পাজরে কী বাজে?
উত্তর: মৃত সুরাসুরের পাজরে ঝাঁঝর বাজে।
’আগমনী’ কবিতায় উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্য কী?
উত্তর: আগমনী কবিতায় উল্লেখ্য বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, অনুপ্রাসের আধিক্য, ছন্দের নতুনত্ব এবং ধ্বানাত্মক ক্রিয়াবাচক শব্দের নিশ্চিত প্রসার।
দুর্গা ‘বার মহিষাসুরকে বধ করেন?
উত্তর: দুর্গা তিন বার মহিষাসুরকে বধ করেন।
’আগমনী’ কবিতার রণাঙ্গন কোথাকার?
উত্তর: এ রণাঙ্গন স্বর্গরাজ্যে নয়, এ যুদ্ধ সুর অসুরের নয়, এ যুদ্ধ মানব আর দারবের।
’আগমনী’ কবিতার মূল প্রতিপাদ্য কী?
উত্তর: আগমনী কবিতার মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে, দানবশক্তি, পশুশক্তির বিরুদ্ধে সংগ্রাম। মায়ের আবাহনের রূপকে তারই প্রাধান্য পেয়েছে।
আরও পড়ুন:
- বিদ্রোহী কবিতার মূলভাব ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন ও উত্তর
- কামাল পাশা কবিতার মূলভাব ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর
- চর্যাপদের শিল্পমূল্য নির্ণয় কর
- চর্যাপদ নিয়ে ৫০+ টি গুরুত্বপূর্ণ জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর
- ধূমকেতু কবিতার মূলভাব ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর
- বারমাসী বা বারমাস্যা বলতে কী বুঝ?
- কপোতাক্ষ নদ কবিতার মূলভাব, MCQ ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর
আশাকরি, এই ‘আগমনী কবিতার মূলভাব ও জ্ঞানমূলক প্রশ্ন উত্তর’ আর্টিকেলটি আপনার একটু হলেও উপকারে এসেছে।


