ব্রতকথা কী? | বাঙালি নারীর জীবনে ব্রতকথার ভূমিকা লিখ

Join Telegram Channel

হাজার বছরের বাঙালি সংস্কৃতির অন্যতম ধর্মানুষ্ঠান হচ্ছে ব্রত। সাধারণ তপস্যা বা সংযম হচ্ছে ব্রত। মূলত দেবতাকে সন্তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে ব্রত করা হয়।

 

ব্রতকথা কাকে বলে?

 

পূণ্যলাভ ইস্টলাভ পাপক্ষয় প্রভৃতির জন্য অনুষ্ঠিত ধর্মকার্য বা ধর্মানুষ্ঠান হচ্ছে ব্রত। ব্রত হচ্ছে মূলত তপস্যা বা সংযম। যে দেবতার আরাধনা কল্পে ব্রত করা হয় সেই দেবতার মহাত্মা কাহিনিকে ব্রতকথা বলে।

 

বাঙালি নারীর জীবনে ব্রতকথার ভূমিকা লিখ

 

 
কতকগুলো ব্রত পালন দিয়েই মূলত বাঙালি মেয়েদের জীবন শুরু হয়। যেমন: আট বছর বয়স পর্যন্ত কুমারী মেয়েরা বৈশাখ মাসে শিব পূজা ও পুণ্যিপুকুর, কার্তিক মাসে কুলকুলতি, পৌষ মাসে সোদর, মাঘ মাসে মাঘমণ্ডল ব্রত ইত্যাদি ব্রত পালন করে।
আর সধ্বা মেয়েদের তো সারা বছরই কোনো না কোনো ব্রত লেগেই থাকে। বৈশাখ মাসে বিধবারা কলসী উৎসর্গ এবং আষাঢ় মাসে অম্বুবাচী ব্রত পালন করে। আষাঢ় মাসের সাত তারিখ থেকে তিন দিন কোনো বিধবা রান্না করে না, সদ্য আগুনের কোনো রান্না গ্রহণও করে না। অম্বুবাচী অর্থ বর্ষার সূচনা। কোনো কোনো অঞ্চলে মেয়েরা পৌষ মাসে টুসু ও ভাদ্র মাসে ভাদুব্রত উৎসব করে।
বিভিন্ন ব্রতে ছাড়াও প্রচলন ছিল-
১. তুষলা ব্রত: তুষ তুষলা তুষলা গো রাই
তোমরা দৌলতে আমরা দু’বুড়ি পিঠা খাই।
২. পুণ্যিপুকুর ব্রত: পুণ্যিপুকুর ব্রতে বাড়ির উঠানে বা ফুলবাগানে ছোট গর্ত করে বেল গাছের ডাল পুঁতে বোশেখের প্রতি সকালে হাসে ফুল, তেল, পাতা, জল নিয়ে মন্ত্র পড়তে হয়-
“পুণ্যিপুকুর পুষ্পমালা।
কে পূজে রে দুপুর বেলা?
আমি সতী শিলাবতী।”
৩. বসুধারা ব্রত: বৃষ্টির কামনায় এ ব্রত পালিত হয়। এটি বৃষ্টিদেবতার উদ্দেশ্যে করা হয়। ব্রতিনীর স্নান, তুলসী গাছে ফলফুল সাজানো, জল ঢালা, দেবতাকে প্রণাম ইত্যাদি করার সময় ছাড়াও কাটতে হয়।
“বট আছেন, পাকুড় আছেন
তুলসী আছেন পাটে
বসুধারা ব্রত করলাম
তিন বৃক্ষের মাঝে।”
 
৪. মাঘমণ্ডল ব্রত মূলত সূর্য জাগরণের পূজা।
উঠ উঠ সূর্য ঠাকুর ঝিকিঝিকি দিয়া।
না উঠিতে পারি আমি নিশির লাগিয়া।
আরও পড়ুন:
 
৫. যমপুকুর ব্রত: কুমারী জীবনে যমপুকুর ব্রতানুষ্ঠানের ভেতর দিয়ে পিতৃ সংসারে সম্পদ কামনা করা হয়।
সোনার কৌটা রূপোর খিল।
আমার ভাই বাপ হোক লঙ্কেস্বর।
৬. হরিচরণ ব্রত: মাটিতে বা চন্দন পিড়িতে চন্দন দিয়ে লক্ষীর পায়ের মতো দুটি পা এঁকে, তাতে পাঁচটি করে আঙুল আঁকতে হয়। তারপর দুটি তুলসী পাতা দু’পায়ে দিয়ে ছড়া পড়তে হয়।
“হরির চরণ হরির পা
হরি বলেন ওগো মা
আজ কেন গো শীতল পা।”
পরিশেষে বলা যায় যে, ব্রতকথা বাঙালি সংস্কৃতির আবহমানকালের প্রতিচ্ছবি। তাই ব্রতকথার মাধ্যমেই বাঙালির আবহমান কালের প্রতিরূপ খুঁজে পাওয়া যায়। উপযুক্ত ব্রতগুলোই ছিল বাঙলার ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনের স্তম্ভস্বরূপ।
Spread the love
Join Telegram Channel

হ্যালো "ট্রিকবিডিব্লগ" বাসী আমি ওসমান আলী। দীর্ঘদিন থেকে অনলাইনে লেখালেখির পেশায় যুক্ত আছি। Trick BD Blog আমার নিজের হাতে তৈরি করা একটি ওয়েবসাইট। এখানে আমি প্রতিনিয়ত ব্লগিং, ইউটিউবিং ও প্রযুক্তি সহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ টিপস এন্ড ট্রিক্স রিলেটেড আর্টিকেল প্রকাশ করে থাকি।

Leave a Comment

error: Content is protected !!