মানুষের জীবনের বড় একটা অংশ আবেগের সাথে জড়িত। আবেগের প্রভাব মানুষের আচরণের উপর ব্যাপক এবং গভীর।
এই আর্টিকেলে তাই আবেগ ও আবেগিক বিকাশ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তাই এই বিষয়ে পূর্ণাঙ্গ ধারণা অর্জন করতে পুরো আর্টিকেলটি পড়ুন।
আবেগ ও আবেগিক বিকাশ কি?
মানুষ হচ্ছে যুক্তিশীল প্রাণী। মানুষের যুক্তি, বুদ্ধি, ও বিবেচনা নির্ভর। এসব থাকা সত্ত্বেও মানুষের বেশিরভাগ আচরণ পরিচালিত হয়ে থাকে আবেগের দ্বারা।
যদি একটি শিশুর আচরণকে ভালোভাবে বুঝতে চান তবে তার আবেগ সম্পর্কে আগে আপনার বুঝতে হবে।
[আবেগ কি, আবেগের প্রকৃতি, আবেগ কিভাবে বিকাশিত হচ্ছে, আবেগের কাজ ইত্যাদি] এসব বিষয় সম্পর্কে জানতে বা বুঝতে না পারলে একটি শিশুর আবেগের প্রকৃতি বুঝা মুশকিল হবে।
শিশুর সুষ্ঠু ব্যক্তিত্ব নির্ভর করে তার আবেগিক বিকাশের উপর।
সুস্থ্য ও স্বাভাবিক জীবন-যাপন করার জন্য আবেগের সুষ্ঠু বিকাশ ও প্রকাশের প্রয়োজন রয়েছে।
যদি আবেগিক বিকাশ সুষ্ঠু না হয় তাহলে আবেগিক আচরণ ও সমাজ সম্মত বা সুন্দর সংযত হয় না।
যদি আপনার আবেগিক বিকাশ সুস্থ না হয় তাহলে আপনার জীবনে আবেগিক সমস্যা ও অপসঙ্গতি দেখা দিতে পারে।
একজন শিশুর জীবনে এই আবেগের বিকাশ ধীরে ধীরে বিভিন্ন পর্যায়ে বিভিন্ন ভাবে হয়ে থাকে।
শিশুর এই আবেগিক বিকাশ তার ভবিষ্যৎ ব্যক্তিত্ব গঠন এবং তার শিক্ষা গ্রহণকেও দারুন ভাবে প্রভাবিত করে থাকে।
একজন শিশুর আবেগিক বিকাশ, নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনা করা অসম্ভব যদি না তার মা-বাবা ও শিক্ষক এই আবেগ বা আবেগিক বিকাশ সম্পর্কে না জেনে থাকে।
আবেগ নিয়ন্ত্রণ ও পরিচালনার উপর একজন শিশুর সুস্থ্য ব্যক্তিত্বের বিকাশ নির্ভর করে থাকে।
যদি বড়রা বিশেষ করে শিক্ষক মহল যদি এই দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করতে পারে তবে শিশুরা উপযুক্তভাবে শিক্ষা গ্রহণ করতে ও সুস্থ্য ব্যক্তিত্বের অধিকারী হতে পারবে।
আবেগের সংজ্ঞা দাও
ইংরেজি Emotion শব্দটি এসেছে ল্যাটিন শব্দ Emovere থেকে যার অর্থ হচ্ছে প্রক্ষুব্ধ বা উত্তেজিত হওয়া।
আবেগের সম্পর্ক মনের একটি বিশেষ অবস্থার সাথে। আমাদের দেহ ও মনে কোনো কোনো উদ্দীপকের সাড়া দেওয়ার ফলে বিশেষ প্রতিক্রিয়া বা আলোড়নের সৃষ্টি হয়। তার ফলে আমরা নানান ধরনের অভিজ্ঞতা অনুভব করি এবং প্রকাশ করি।
যেমন: হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ, রাগ-অভিমান ইত্যাদি।
মূলত উপরে আলোচিত এসব বিষয়কেই বলা হয় আবেগ।
আবেগকে ব্যাখ্যা করা একটি জটিল কাজ।
ক্ল্যাপারীড বলেছেন, ‘আবেগের মনস্তত্ত্ব মনোবিদ্যার এক জটিল বিষয়’।
আবেগের সংজ্ঞা প্রদান করতে গিয়ে মনোবিজ্ঞানীরা ভিন্নমত দিয়েছেন।
“আবেগ অনুভূতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কিন্তু আবেগের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে শারীরিক বহিঃপ্রকাশ। আবেগ হচ্ছে মনের একটি বিচলিত অবস্থা। একটা, ‘strirred up state of agitation.”
একজন মানুষ যখন আবেগের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে থাকে তখন সে তার দেহে ও মনে উত্তেজিত অবস্থায় থাকে ও তার স্বাভাবিক সাম্যাবস্থা নষ্ট হয়ে যায়।
প্রবৃত্তিমূলক ক্রিয়ার সাথে যুক্ত মানসিক অবস্থাকে আবেগ বলেছেন ম্যাকযুগাল।
যখন কেউ কোনো বিশেষ বস্তুর সাথে যুক্ত অনুভূতি মূলক অবস্থাকে আবেগ বলেছেন।
ড্রেবারের মতে, ‘আবেগ একটি জটিল মানসিক অবস্থা, যাতে বিভিন্ন প্রকারের শারীরক পরিবর্তন ঘটে এবং মনে একটা জোরালো মনোভাব তৈরি হয় যার জন্য বিশেষ একটা কিছু করার ইচ্ছে জাগে। এই অনুভুতি খুব তীব্র হলে বুদ্ধিকে আচ্ছন্ন করে এবং অসতর্ক ভাবে কোন কিচু করার প্রবৃত্তি হয়।’
আবেগ হচ্ছে অনুভুতির সামগ্রিক ও বিচলিত একটি অবস্থা।
ভয় পাওয়া, খুশীতে উচ্ছল হওয়া, বিস্ময়ে অবাক হওয়া, রাগে উত্তেজিত হওয়া সব আবেগেই মনের অনুভুতি এবং তার দৈহিক প্রকাশ নিবিড় ভাবে জড়িত।
আনন্দ, রাগ, হিংসা ইত্যাদিতে মনের বিশেষ অবস্থাকে বুঝায় তাকেই আবেগ বলে।
আবেগ কত প্রকার ও কি কি? বা আবেগের শ্রেণীবিভাগ
আবেগমূলক পরিস্থিতিকে বিশ্লেষণ করলে তিনটি দিক পাওয়া যায়। যথা:
১. বাহ্যিক আচরণ,
২. অভ্যন্তরীন প্রতিক্রিয়া ও
৩. আবেগমূলক অনুভুতি বা সচেতনতা।
আবেগিক বিকাশের বৈশিষ্ট্য
আবেগিক বিকাশের বৈশিষ্ট্যসমূহ নিচে দেওয়া হলো:
- আবেগের সঙ্গে দেহের সম্পর্ক আছে। েএই সম্পর্কের জন্যই অনুভুতি ও আবেগ দুটো আলাদা হয়েছে। আবেগের সঙ্গে কম বেশি শারীরিক পরিবর্তন হবেই্ হাসলে মুখের পরিবর্তন হচ্ছে। যখন খুব রাগ হয় তখন আমরা চিৎকার দিয়ে কথা বলি, হাত পা ছুড়ি।
- আবেগ জাগানোর জন্য উদ্দীপক প্রয়োজন। উদ্দীপক ছাড়া আবেগ সৃষ্টি হয় না। পারিবেশিক উত্তেজনা ব্যক্তির মধ্যে অনেক আবেগ তৈরি করে। বাইরের যে কোন বস্তু বা বস্তু সম্পর্কে জ্ঞান, অভিজ্ঞতা বা ধারনা সব কিছুই আবেগ সৃষ্টি করতে পারে। কোনো ব্যক্তির অশোভন আচরণে আমরা যেমন রেগে যেতে পারি। তেমনি কষ্টকর কোন অভিজ্ঞতা স্মৃতিচারণ করে কাঁদতে পারি। অর্থাৎ আবেগ জাগ্রতকারী উদ্দীপক বাহ্যিক এবং অভ্যন্তরীণ উভয় প্রকার হতে পারে।
- আকাঙ্কার সাথে আবেগ জড়িত। কোন প্রবল ইচ্ছা বা আকাঙ্খাকে জোর করে অবদমন করলে আবেগ সৃস্টি হয়। বিশেষ করে এটা ড্রেভারের মত।
- আবেগের আরেক বৈশিষ্ট্য হচ্ছে অনেক সময় আবেগ দৈহিক অবস্থা থেকে সৃষ্ট হয়। যেমন: অসুস্থ অবস্থায় কেউ বিরক্ত করলে খুব রাগ হয়।
- আবেগের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে েএর স্থায়ীত্ব। আমরা হঠাৎ রেগে যাইনা বা হঠাৎ রাগ থেকে যায় না। ধীরে বৃদ্ধি পায় ধীরে কমতে থাকে।
পরিশেষে, উপরোক্ত বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করে বলে যেতে পারে যে, ‘কোন বিশেষ বস্তু বা অভিজ্ঞতার প্রতি আমাদের যে মানসিক অনুভুতি তার বাহ্যিক প্রকাশিত রূপই হচ্ছে আবেগ।
আরও পড়ুন:
- নগরীয়তা কাকে বলে?
- মহাকাব্য কাকে বলে? মহাকাব্য হিসেবে মেঘনাদবধ কাব্যের সার্থকতা আলোচনা কর
- শহরায়ন বা নগরায়ন কাকে বলে?
- শহরায়ন ও নগরীয়তার মধ্যে সম্পর্ক গুলো লিখ
- ছয় দফা কর্মসূচী আসলে কি? ছয় দফা কর্মসূচীর দফা ছয়টি কি কি?
- অতি শহরায়ন কাকে বলে?
- সুফিবাদ কাকে বলে? | সুফিবাদের মূলনীতিসমূহ কি কি?
আবেগ ও আবেগিক বিকাশ সম্পর্কে বহুনির্বাচনী প্রশ্ন ও উত্তর
১. ‘প্রবৃত্তিমূলক ক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত মানসিক আবেগ বলে’ – একথা কে বলেছেন?
(ক) ফ্রয়েড
(খ) ম্যাকডুগাল
(গ) ড্রেভার
(ঘ) ক্ল্যাপারীড
উত্তর: (গ) ড্রেভার।
২. মনের স্বতঃস্ফূর্ত প্রকাশমান অবস্থা যা ব্যক্তিকে দৈহিক ও মানসিক দিক থেকে বিচলিত করে তাকে কি বলে?
(ক) উত্তেজনা
(খ) সেন্টিমেন্ট
(গ) আবেগ
(ঘ) দুঃচিন্তা
উত্তর: (গ) আবেগ।
৩. হাসলে মুখের পরিবর্তন হয়। এখানে আবেগের কোন বৈশিষ্ট্য প্রকাশ পাচ্ছে?
(ক) আবেগের সঙ্গে উদ্দীপকের সম্পর্ক
(খ) আবেগের সঙ্গে মনের সম্পর্ক
(গ) আবেগের সঙ্গে স্থায়ীত্বের সম্পর্ক
(ঘ) আবেগের সঙ্গে দেহের সম্পর্ক
উত্তর: (ঘ) আবেগের সঙ্গে দেহের সম্পর্ক।
৪. পরীক্ষার ফলাফল বেরিয়েছে। জামিল প্রথম হয়েছে আনন্দে তর কান্না এসে গেল। এখানে আবেগের বাহ্যিক আচরণ কোনটি?
(ক) পরীক্ষা
(খ) প্রথম হওয়া
(গ) আনন্দ
(ঘ) কান্না
উত্তর: (ঘ) কান্না।
৫. আবেগের মানসিক দিক কোনটি?
(ক) অনুভূতি
(খ) উত্তেজনা
(গ) বাহ্যিক আচরণ
(ঘ) শারীরিক প্রতিক্রিয়া
বি:দ্র: এই আর্টিকেলের বিভিন্ন তথ্য ও উপাত্ত অনলাইন হতে সংগৃহীত করা হয়েছে।
ধন্যবাদ।


